Header Ads

Dunkirk (2017) Movie Review In Bangla

Dunkirk2017MovieReviewInBangla

Dunkirk (2017)


Director:

 

মুভি রিভিউঃ ডানকার্ক
পরিচালকঃ ক্রিস্টোফার নোলান
মুক্তি পাওয়ার পরদিন বউ আর আমি অফিস ফাঁকি দিয়ে দেখে আসলাম ৭০ মিমি আইম্যাক্সে ক্রিস্টোফার নোলানের প্রথম ওয়ার মুভিঃ ডানকার্ক। সত্যি বলতে বেশ অন্যরকম লেগেছে, আর দশটা যুদ্ধের ফিল্মের মতো না। প্রায় সব বিখ্যাত যুদ্ধের ফিল্ম দেখা হয়েছে, এটা প্রায় কোনটারই ক্যাটাগরিতে পড়ে না। মুভির কাস্টিংয়ে আছেন হ্যারি স্টাইলস, টম হার্ডি, সিলিয়ান মারফি, মার্ক রাইল্যান্স, কেনিথ বোরো প্রমুখ। মিউজিক এবং সাউন্ড এডিটিঙয়ে আছেন সিনেমাখোরদের সবার পছন্দ হ্যান্স জিমার।
ডানকার্ক সিনেমার গল্প ডানকার্ক এভাকুয়েশন নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্ব
যুদ্ধের প্রথম পর্বে জার্মানি যখন ইউরোপ দখল করে নেয় তখন প্রায় ৪ লক্ষ ব্রিটিশ সৈন্য ডানকার্কে আটকে পড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাইল দূরে সাগরের ওপারে তাদের ব্রিটিশ আইল্যান্ডস, পিছনে শত্রু তাদের ঘিরে ফেলেছে, হাতে সময় আছে বড়জোর একদিন। তারা কি পারবে মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে?
ডানকার্ক নিয়ে মনে হয় কিছু রিভিউ এসে পড়েছে, আমি তাও তাঁর সাথে আরেকটু যোগ করছি, বিশেষ করে মুভির কোন কোন জিনিস অন্যরকম লেগেছেঃ প্রথমত, মুভির পটভূমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আক্রমণের মুখে ব্রিটিশদের ইউরোপ থেকে কোনমতে বেঁচে ফেরা হলেও পুরো মুভিতে একজন জার্মান সৈনিক বা পাইলটের চেহারাও দেখানো হয় নি। কিন্তু তাতে মুভির ইন্টেন্সিটি বা সাস্পেন্স একবিন্দুও কমে নি।
মুভিতে তিনটা গল্প প্যারালালি চলেছে, একটা হল সীবিচ থেকে সৈন্য অপসারণ, দ্বিতীয়টি হল ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের (RAF) আকাশসীমা প্রহরা আর শেষটি হল ডানকার্ক এভাকুয়েশনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। এখানে পরিচালক নন-লিনিয়ার স্টোরি লাইনের আশ্রয় নিয়েছেন। যেমনঃ প্রথমটির টাইম স্প্যান প্রায় পুরো একদিন, দ্বিতীয়টি দুপুর থেকে সন্ধ্যা, শেষটি সকাল থেকে সন্ধ্যা। প্রত্যেকটা গল্পই মুভির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পর পর আসা যাওয়া করেছে...এজন্য শুরুর দিকে মাঝে মধ্যে মনে হতে পারে এক দৃশ্যের পর আরেক দৃশ্যের সময় যেন মিলছে না। কিন্তু কিছুক্ষণ দেখার পরই আপনি বুঝতে পারবেন তিন সময়ের তিন লেংথের তিনটা গল্প পাশাপাশি এগুচ্ছে এবং শেষের দিকে এসে বোঝা যায় কিভাবে একটা গল্প আরেকটার সাথে ইন্টারটোইয়াইন্ড। ক্রিস্টোফার নোলান মেমেন্টো, প্রেস্টিজ এবং ইন্সেপশনে নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিংয়ে আমাদের আগেই তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, সেই হল অব ফেইমে আরেকটা সংযোজন হল ডানকার্ক।
মুভির অন্যরকম লাগার আরেকটা কারণ হল সাধারণত এরকম ওয়ার মুভিগুলোতে কোন একটা গ্রুপের মিশনকে নিয়ে গল্প চলতে থাকে, তাঁদের মানবিক দিকগুলো গল্পের মাঝে আমাদের নাড়া দেয়, তাঁদের চরিত্রের নিষ্ঠুর দিকগুলোও আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু ডানকার্কে নোলান এরকম কিছু দেখানোর চেষ্টা করেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন, বিশাল একটা যুদ্ধে ইন্ডিভিজুয়ালি সবাই সারভাইভার আর কালেক্টিভলি মানুষ শুধু কিছু সংখ্যা। ব্রিটিশরা বার বার চেষ্টা করছে জীবিতদের সংখ্যা বাড়াতে, আর জার্মান লুফতওয়াফা (এয়ারফোর্স) এবং নেভি চেষ্টা করছে যতটুকু সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানোর। এর মধ্যে সৈনিকদের ভয়, টেনশন, কনফিউশন, হতাশা এসব কিছু সামগ্রিকভাবে আপনাকে ছুঁয়ে যাবে। এখানে হ্যান্স জিমার আবারও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। সারা মুভি জুড়ে তাঁর সাউন্ডট্র্যাক আপনাকে একটা অজানা আতঙ্কে বেঁধে রাখবে, এক মুহূর্তের জন্য মনে হবে শান্তি নেই যেন। কখন মাথার উপর জার্মান যুদ্ধবিমান হাজির হয়, কখন একটা সাবমেরিন নিচে দিয়ে টর্পেডো মেরে বসে এসব দুঃচিন্তায় সীবিচে আটকে পড়া সৈনিকদের মতো আপনিও সারাক্ষণ অস্বস্তির মধ্যে থাকবেন।
ডানকার্কে সেভিং প্রাইভেট রায়ানের মতো মুভির শুরুতেই চোয়াল ঝুলে যাওয়ার মতো যুদ্ধ নেই,পুরো মুভি জুড়েই তেমন কোন "গ্র্যান্ড সিন" নেই, ক্যারেক্টারগুলোর প্রতিও আপনার আলাদা করে খুব মমতা জন্মাবে না। কিন্তু আপনার অনুভূতি তাড়িত হবে, আপনি বুঝবেন এটা অনেক বড় একটা বিপদ, সীবিচের লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে আপনি যেন নিজেকে খুঁজে পাবেন, আপনি হতাশ হবেন, আপনি কনফিউজড হবেন, আবার আপনি আশায় বুক বাঁধবেন। পরিচালক নোলান যেন ইচ্ছা করেই চরিত্রগুলোর প্রতি আমাদের রোমান্টিক হতে দেন নি। তার বদলে তিনি বলতে চেয়েছেন, এরকম একটা বিপদসংকুল সময়ে কিভাবে একটা দেশের সামরিক এবং বেসামরিক মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরস্পরের জন্য দাঁড়াতে পারে। সেই গল্প বলায় এবং দেখানোয় নোলান এবং জিমার আবারও সার্থক। টানটান উত্তেজনা আর চোখ ধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফিতে ভরা ডানকার্ক পরিচালক নোলানকে সিনেমা জগতে আরও বহুদিনের জন্য অমর করে রাখবে।

No comments

copyright b33 © 2016. Powered by Blogger.